প্রত্যয় ডেস্ক, বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ মোটর সাইকেল হাতিয়ে নিতে রেজাউল ইসলাম নামে এক সহকর্মীকে বালিয়াডাঙ্গীতে ডেকে এনে গলায় রশি পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা ও আগুনে পুড়িয়ে লাশ গোপনের চেষ্টার দায়ে আদালত সুইট আলম (২৯), মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ (২৯) ও হাসান জামিল(৩২) নামে অপর ৩ সহকর্মীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে ।দন্ডিত ৩ আসামীর ২ জন আদালতে হাজির থাকলেও হাসান জামিল নামে একজন পলাতক রয়েছে।
এছাড়াও ২০১ ধারায় প্রত্যেককে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর, ৩৭৯ ধারায় ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ৩ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারির নির্দেশ প্রদান করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিএম তারিকুল কবীর উপরোক্ত রায় প্রদান করেন। মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামীরা হলেন, সুইট আলম নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বারিল্যা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে, মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ দিনাজপুর জেলার চিবিরবন্দর থানার দক্ষিন পলাশবাড়ি গ্রামের মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে এবং হাসান জামিল ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার ভানোর সরকারপাড়া গ্রামের বজির উদ্দীনের ছেলে ।
আসামী হাসান জামিল ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছে। নিহত রেজাউল ইসলাম (১৮) দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার আন্ধারমুহা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে ।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার আন্ধারমুহা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম স্থানীয় টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজে লেখাপড়ার পাশাাপশি ওয়ার্ল্ডভিশন-২১ নামে একটি মাল্টিলেবেল কোম্পানীতে চাকুরি করত। একই সঙ্গে চাকুরি করার সুবাদে দন্ডিত আসামীদের সঙ্গে রেজাউলের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা সকলে মিলে দিনাজপুরের পাবর্তীপুরে গিয়ে ওই কোম্পানীর নতুন অফিস খোলার কাজ করা কালে নিহত রেজাউলের বাজাজ মোটর সাইকেলের প্রতি অপর বন্ধুদের চোখ পড়ে। তারা ওই মোটর সাইকেলটি নিজেরা হাতিয়ে নিতে রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে এবং তাকে আসামী হাসান জামিলের বাড়ি এলাকায় জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর এলাকায় নিয়ে আসে। ২০১৫ সালের ৪ মার্চ সন্ধায় দন্ডিত আসামীরা সকলে মিলে নিহত রেজাউল ইসলামকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর কৈমারী গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পরিকল্পনা মতে তারা রেজাউল ইসলামকে ঘাড় মটকে ও রশি দিয়ে গলায় পেচিয়ে হত্যা করে। পরে তার পড়নের কাপড় ও বাঁশঝাড়ের শুকনা ডালপাতা দিয়ে মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে বিকৃত করে। হত্যার পর আসামীরা নিহতের মোটর সাইকেলটি আসামী জামিলের আত্বীয়র বাড়িতে রেখে কর্মস্থলে ফিরে যায়। ঘটনার ২দিন পর ৬ মার্চ পুলিশ বাঁশঝাড় হতে নিহতের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করে একটি হত্যা মামলা রুজু করে।
ওদিকে মোটর সাইকেল সহ রেজাউল নিখোঁজ হওয়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করলে র্যাব-১৩ মাঠে নামে এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ওই বছরের ২২ মে দন্ডিত ৩ আসামীকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করলে হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। পরে পুলিশ আসামীদের প্রদত্ত স্বীকারোক্তি মোতাবেক ৩ জনের বিরুদ্ধে একই বছরের ২৪ আগষ্ট আদালতে চার্জসীট দাখিল করে।
মামলার এজাহার, আসামীদের স্বীকারোক্তি ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত উপরোক্ত রায় প্রদান করেন।
মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে সরকারি কৌসুলী এড.আব্দুল হামিদ এবং আসামীপক্ষে এড মোস্তাক আলম টুলু পরিচালনা করেন।